• আলেয়া • পিঁপড়ার শারীরিক গঠন • কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান
বিষয় | পিঁপড়ার শারীরিক গঠন |
---|---|
লেখক | সজীব (ছদ্ম) |
সিরিজ | কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান |
এ জগত কত রহস্যময়। কত কিছু রয়ে গেছে আমাদের জ্ঞানের বাহিরে। সব রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব নয় তারপরেও আমরা ছুটছি রহস্যের পিছনে। না হলে ক্ষুদ্র পিপীলিকা নিয়ে আমাদের এত উৎসাহ কেন?
এই ক্ষুদ্র ও রহস্যময় কীটের রহস্য উদঘাটনে মানুষ নানা গবেষণা করে চলেছে। আর সেখান থেকেই পিপীলিকার গঠন সম্পর্কে আমরা নানান তথ্য পেয়েছি।
তবে তার চেয়ে ও অনেক রহস্যময় একটা বিষয় হলো বর্তমানে আবিষ্কৃত পিপিলিকা সম্পর্কিত তথ্য গুলো অনেক আগেই কুরআনুল কারীমে ইঙ্গিতের সাথে বর্ণনা করা হয়েছে। যা আমি অন্য একটি ব্লগে সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ করেছি।
এখানে বিশ্লেষণ করতে যাচ্ছি পিপিলিকা কি আসলেই কাচের তৈরি ?
পিপিলিকা কি কাঁচের তৈরি?
আসলে পিপিলিকা কাঁচের তৈরি কিনা সেটার জানার আগে জানতে হবে কাচ কিসের তৈরি। কাঁচ অনেক সময় প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হলেও প্রকৃতপক্ষে কাঁচ তৈরি করা হয় কৃত্রিম পদ্ধতিতে। কাঁচ তৈরির প্রধান উপাদান হলো সিলিকন ও বালি ( সিলিকন অক্সাইড)। সিলিকন সোডা ও চুন'কে ১,২০০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গলিয়ে কাঁচ তৈরি করা হয়।
তাহলে বুঝতেই পারছেন কাঁচ কোন মৌলিক উপাদান না, কাচের মৌলিক উপাদান হল সিলিকন অক্সাইড।
সুতরাং কাঁচ থেকে কোনভাবেই পিপিলিকার জন্ম হয়নি এটা কোন বিজ্ঞানীও বলেনি এবং কুরআনেও সরাসরি উল্লেখ নেই। তাহলে এমন মিথ কিভাবে ছড়ালো। আসুন জেনে আসি সেই ঘটনা।
এর পেছনের গল্প :
একবার কিছু ইউরোপীয় স্কলার কয়েক সদস্য বিশিষ্ট একটি গবেষক টিম গঠন করেছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল একথা প্রমাণ করা যে, কোন কিতাবই নিখুঁত ও নির্ভুল নয়। যেহেতু কুরআন দাবি করে এটি একটি নির্ভুল কিতাব, এজন্য শুরুতে তারা কুরআন'কে বেছে নিয়েছিল।
কুরআনে যেহেতু ধর্মীয় দর্শন সেহেতু তাদের অনেক আত্মবিশ্বাসের সাথে ধারণা করেছিল যে দর্শনগত কিছু ভুল অবশ্য তারা খুঁজে পাবে। এবং এর দ্বারা ধর্মীয় বিশ্বাসকে ছোট করার চেষ্টা করবে।
যেমন ভাবনা তেমন কাজ, তারা কঠিন গবেষণা শুরু করে। তবে কঠিন গবেষণা করেও তারা কোন একটি বিষয়ে একমত হতে পারেনি বরং নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি করে।
এরপর তারা সিদ্ধান্ত নেয় কুরআনের ব্যকরণগত ত্রুটি বের করবে ,যেখানে মতানৈক্য হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এক্ষেত্রেও তারা অসফল হয়। অবশেষে তারা একটি শব্দের ব্যবহারিক অর্থ ও প্রয়োগের স্থান নিয়ে আপত্তি তুলল।
শব্দটি হল “لا يحطمنكم” লা- ইয়াহতিমান্নাকুম , এটি সূরা নামলের ১৮ নাম্বার আয়াতে রয়েছে। এর মূল শব্দ হলো "التحطيم "আলইহাতিম ,যার অর্থ হচ্ছে ভেঙে টুকরো টুকরো করা বা পিষে গুড়া করা। কাজেই التحطيم শব্দটির ব্যবহার কাঁচ বা কাঁচ জাতীয় পদার্থ ছাড়া অন্য কিছুর জন্য অশোভনীয়। কিন্তু কুরআনে এই শব্দটির ব্যবহার করা হয়েছে পিঁপড়াকে পিষে পেলা অর্থে।
তাদের সম্মিলিত যুক্তি হলো পিঁপড়াকে কাঁচের মত টুকরো করা বা গুড়া করা যায় না অতএব শব্দটি পিপড়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা একেবারেই ভুল। এভাবে তারা একটা অযাচিত ভুল দেখিয়ে নিজেদের মিশনকে সফল ঘোষণা করলো।
কিন্তু এর বহু দিন পর অস্ট্রেলিয়ার প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একজন অধ্যাপক, যিনি পিঁপড়ার জীবন রহস্য নিয়ে গবেষণা করছিলেন, তিনি আবিষ্কার করেন পিপড়ার শরীরের বাহিরের অংশে প্রায় ৭৫ শতাংশ কাঁচের উপাদান বিদ্যমান। এবং এর শরীর উপরিভাগ এক প্রকার উন্নত মানের গ্লাস ফাইবার ।
ফলে একটি মৃত পিঁপড়ার খোলস সামান্য আঘাতে ভেঙে অনেক গুলো খন্ডে টুকরো হতে দেখা যায়।এটা দেখে তিনি বুঝতে পারলেন কেন আল্লাহ তাআলা (التحطيم) "আলইহাতিম" শব্দটি পিঁপড়ার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছেন। ফলে তিনি ইসলামের প্রতি অনুরাগী হয়ে পড়েন।
( সূত্র : মিশরীয় আরবি ম্যাগাজিন)
শেষ কথা:
এই কারনেই অনেকেই বলে থাকে পিপীলিকা কাঁচের তৈরি। যারা বলেন পিপীলিকা কাঁচের তৈরি, তাঁরা যার কথার রেফার উপস্থাপন করে, তিনি নিজেও এটা বলেন নি। বরং পিপীলিকার শরীরের উপস্থিত পদার্থের ভিত্তিতে অর্থাৎ শারীরিক গঠনের কারণে পিপীলিকার জন্য (التحطيم) "আলইহাতিম" শব্দটির ব্যবহার যথোপযুক্ত এবং নিখুঁত।
পিপীলিকার কিছু প্রজাতির মধ্যে কাঁচের উপাদান অনেক বেশি দৃশ্যমান। ফিলিপাইনের রেইনফরেস্ট' এ এক প্রকার পিপীলিকা দেখা যায়, এদের নাম Pirate Ant। এরা দেখতে একেবারে স্বচ্ছ কাঁচের টুকরোর মতো।
ফলে এই বিষয়ে একমত হওয়া যায় যে কুরআনে ব্যবহৃত (التحطيم ) আলইহাতিম শব্দটি কোনভাবেই অশোভনীয় নয়, বরং যথোপযুক্ত।
তবে আল্লাহ তাআলা কুরআন সরাসরি বলেননি পিপীলিকা কাঁচের তৈরি।
সুতরাং আমাদের আগ বাড়িয়ে কিছু বলা উচিত নয়। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন তিনি পিপীলিকাকে কি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। তিনিই সর্বজ্ঞ।
তবে এটাই সত্য যে পিপীলিকার শরীরে কাঁচের উপাদান বিদ্যমান।
তথ্য সুত্র:
১, সূরা আন্ নামল ১৮।
২, মিশরীয় আরবি ম্যাগাজিন।